ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হলে ইউরোপ আর তেহরানের পারমাণবিক ইস্যুতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না।
২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যার নাম ছিল ‘যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা’ (জেসিপিওএ)। এই চুক্তিতে ইরানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, রাশিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছিল। এতে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তবে তা কেবলমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সীমা—৩.৭%—অবধি সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। এর বদলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো ধাপে ধাপে প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
তবে ২০১৮ সালে ইসরায়েলের চাপে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তি থেকে সরে যান। পরের বছর ইরানও চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়। চুক্তির একটি ধারা অনুযায়ী, ইরান যদি কোনোভাবে চুক্তি লঙ্ঘন করে, তবে তার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনরায় কার্যকর হবে।
গতকাল (শনিবার) আব্বাস আরাগচি বলেন, ইরান আবারও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য আলোচনায় বসার বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। তিনি জানান, আলোচনা শুরুর সময়, স্থান, কাঠামো ও উপাদান—সবকিছু নিয়েই ইরান খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, আলোচনার বিষয় হবে কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। ইরানের সামরিক সক্ষমতা বা অন্য কোনো ইস্যু আলোচনার অন্তর্ভুক্ত হবে না।
কূটনীতিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আলোচনার মূল লক্ষ্য হবে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আস্থা তৈরি এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
এর আগে, গত জুনে ইসরায়েল তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনা, সামরিক নেতারা, পরমাণুবিজ্ঞানী এবং আবাসিক এলাকায় ব্যাপক হামলা চালায়, যাতে শত শত মানুষ নিহত হয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এ হামলার কারণ হিসেবে ১৩ জুন ইরানের হুমকি থেকে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করার কথা বলেন। তবে ইরান দাবি করে, এটি ছিল বিনা উসকানিতে জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন।
পাল্টা জবাবে ইরানও ইসরায়েলে হামলা চালায়। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। তারা বাংকার বিধ্বংসী বোমা দিয়ে ইরানের ফর্দো, নাতানজ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। ইরানও কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা আঘাত হানে। টানা ১২ দিন চলা এই সংঘাতের অবসান ঘটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণার মাধ্যমে।
সংঘাতের পর ইরান আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের ঘোষণা দেয়, সংস্থাটির প্রতি গভীর অনাস্থা প্রকাশ করে।
শনিবার আরাগচি বলেন, এখন থেকে আইএইএর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ‘নতুন কাঠামোয়’ চলবে। কারণ, সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতসংক্রান্ত একটি আইনে স্বাক্ষর করেছেন।
নতুন আইন অনুযায়ী, ভবিষ্যতে আইএইএ যদি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করতে চায়, তবে সেটির জন্য ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল কাউন্সিলের অনুমোদন লাগবে।